তখন নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটিতে পড়তাম। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় টুকটাক টিউশনি করাতাম। এক বান্ধবীর অনুরোধে তার এক নতুন ছাত্রীর তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া ভাইকে পড়ানোর কথা বললো। ছাত্রের অভিভাবকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার পর কথাবার্তা বলে দু'তিনদিন পর থেকে পড়ানো শুরু করি। উল্লেখ্য, ছাত্রটির পরিবার আগে আরব আমিরাতের দুবাইতে অনেক বছর ছিলো, যখন পড়ানো শুরু করি তার মাসখানেক আগে ঢাকায় পুরোপুরি চলে আসে। ছাত্রটি গুলশানের বেশ নামী-দামী একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করানো হয়।
প্রথম যেদিন পড়াতে যাই, সেদিনই আবিষ্কার করি ছেলেটি শুদ্ধ বাংলা বলতে পারে না। ফ্লুয়েন্ট ইংরেজি, হিন্দি ও নোয়াখালীর লোকাল ল্যাঙ্গুয়েজে কথা বলে (আমি নিজেও নোয়াখালীর পাশের ফেনী জেলায় বড় হয়েছি তাই তার ভাষা বুঝতে সমস্যা হয়নি)। ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি শুদ্ধ বাংলায় কথা বলা শেখোনি আগের স্কুলে?
তার উত্তর ছিলো এমন, 'আঁই যে ইস্কুলে হইরতাম হিয়েনে ইংলিশ আর হিন্দি হড়াইতো।' (মানে আমি যে স্কুলে পড়তাম সেখানে ইংলিশ ও হিন্দি পড়াতো।)তখন নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটিতে পড়তাম। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় টুকটাক টিউশনি করাতাম। এক বান্ধবীর অনুরোধে তার এক নতুন ছাত্রীর তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া ভাইকে পড়ানোর কথা বললো। ছাত্রের অভিভাবকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার পর কথাবার্তা বলে দু'তিনদিন পর থেকে পড়ানো শুরু করি। উল্লেখ্য, ছাত্রটির পরিবার আগে আরব আমিরাতের দুবাইতে অনেক বছর ছিলো, যখন পড়ানো শুরু করি তার মাসখানেক আগে ঢাকায় পুরোপুরি চলে আসে। ছাত্রটি গুলশানের বেশ নামী-দামী একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করানো হয়।
প্রথম যেদিন পড়াতে যাই, সেদিনই আবিষ্কার করি ছেলেটি শুদ্ধ বাংলা বলতে পারে না। ফ্লুয়েন্ট ইংরেজি, হিন্দি ও নোয়াখালীর লোকাল ল্যাঙ্গুয়েজে কথা বলে (আমি নিজেও নোয়াখালীর পাশের ফেনী জেলায় বড় হয়েছি তাই তার ভাষা বুঝতে সমস্যা হয়নি)। ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি শুদ্ধ বাংলায় কথা বলা শেখোনি আগের স্কুলে?
তার উত্তর ছিলো এমন, 'আঁই যে ইস্কুলে হইরতাম হিয়েনে ইংলিশ আর হিন্দি হড়াইতো।' (মানে আমি যে স্কুলে পড়তাম সেখানে ইংলিশ ও হিন্দি পড়াতো।)
তারপর জানতে পারলাম তার পরিবারের সবাই নোয়াখালীর ভাষায় কথা বলে পারিবারিকভাবে আর ছেলেটির জন্ম দুবাইতে, এর আগে সে কখনো দেশে আসেনি।
তারপর পড়াতে পড়াতে আবিষ্কার করি সে আসলে বাংলা সংস্কৃতি, আদব-কেতাব আর আচার-আচরণ সম্পর্কে খুব একটা জানে না। ছেলেটি ইছড়ে-পাঁকা ধরণের হওয়ায় সে নতুন স্কুলেও দুর্নাম কুড়িয়ে নেয়। মারামারি করে শাস্তি পাওয়া, নোয়াখালীর লোকাল ল্যাঙ্গুয়েজে কথা বলে সহপাঠীদের হাসি-ঠাট্টার কারণ হওয়ার কথা প্রায়ই আমাকে বলতো। আমি তাকে বোঝাতাম, সে বুঝতো, কিন্তু পরে আবার সেই একই কান্ড করে এসে আমাকে গর্বের সাথে বলতো, 'স্যার জানেনন্নি? আইজ্জাও ইগ্গারে মাইরছি!"
যাই হোক, এভাবে কিছুদিন গেলো। ম্যাথ, সাইন্সের পাশাপাশি বাংলা বর্ণমালা থেকে শুরু করে বাক্য গঠন পড়িয়েছি। যদিও সে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়তো কিন্তু তার বাংলার দুর্বলতা দেখে বাধ্য হয়ে নিজে থেকে বাংলা পড়াতাম।
যাই হোক, একদিন ছেলেটির বাসায় মেহামান আসে। তার নাকি কোন কাজিন বোনের স্বামী। ছেলেটিকে তার সেই দুলাভাই খুব আদর-যত্ন করে কথা বলেছিলো, তার এটি খুব ভালো লেগে যায়। তাকে যে রুমে পড়াই সে রুমে এক অতিথি বসা ছিলো বসানোর সময়, তখন সে হঠাৎ বলে উঠলো, 'স্যার, আন্নে আঁর দুলাবাই হইবেন্নি? আম্মা কইছে আঁর বইনরে বিয়া করাই দিবো সামনের ফরিক্ষাত ফাশ ন কইরলে! আন্নে আঁর বইনরে বিয়া কইরলে আন্নে আঁরে এই দুলাভাইর মতো আদর কইরবেন, আর আঁই কষ্ট করি আন্নেরে হড়া দেয়ন লাইগদোনো।' (মানে, স্যার, আপনি আমার দুলাভাই হবেন? আম্মু বলেছে আমার বোন আসন্ন পরীক্ষায় [সম্ভবত ক্লাস সেভেন/এইটে পড়তো] পাশ না করলে তাকে বিয়ে দিয়ে দিবে। আপনি আমার বোনকে বিয়ে করলে আমাকে কষ্ট করে আপনার কাছে পড়া দেয়া লাগবে না।)
যাই হোক, আমি তো লা-জওয়াব! বললাম, চুপ করো বলে, যা লিখতে দিয়েছি লিখো। বেশি পন্ডিতি ভালো না।
ওইদিকে অতিথি মুছকি হাসছিলো।
হঠাৎ দেখি ছেলেটি দৌড়ে পাশের রুমে থাকা তার মায়ের কাছে গিয়ে জোরে জোরে বলছে, 'স্যাররে কইছি দুলাভাই বানামু, স্যার সরম পাইছে!' একই কথা তার বোনকেও গিয়ে বললো। তার মা স্কেল নিয়ে পেটাতে পেটাতে আমার সামনে এসে বসিয়ে দিয়ে গেলো। তার মা খুব বিব্রতমুখে বললো, স্যার কিছু মনে করবেন না, ছেলেটা কিছু বুঝে না, যা-তা বলে!
ওই মাসের স্যালারি পাওয়ার পরেই ওই স্টুডেন্টকে টা-টা জানিয়ে চলে আসি। ওইদিনের কথা মনে পড়লে এখনো হাসি পায়!
তারপর জানতে পারলাম তার পরিবারের সবাই নোয়াখালীর ভাষায় কথা বলে পারিবারিকভাবে আর ছেলেটির জন্ম দুবাইতে, এর আগে সে কখনো দেশে আসেনি।
তারপর পড়াতে পড়াতে আবিষ্কার করি সে আসলে বাংলা সংস্কৃতি, আদব-কেতাব আর আচার-আচরণ সম্পর্কে খুব একটা জানে না। ছেলেটি ইছড়ে-পাঁকা ধরণের হওয়ায় সে নতুন স্কুলেও দুর্নাম কুড়িয়ে নেয়। মারামারি করে শাস্তি পাওয়া, নোয়াখালীর লোকাল ল্যাঙ্গুয়েজে কথা বলে সহপাঠীদের হাসি-ঠাট্টার কারণ হওয়ার কথা প্রায়ই আমাকে বলতো। আমি তাকে বোঝাতাম, সে বুঝতো, কিন্তু পরে আবার সেই একই কান্ড করে এসে আমাকে গর্বের সাথে বলতো, 'স্যার জানেনন্নি? আইজ্জাও ইগ্গারে মাইরছি!"
যাই হোক, এভাবে কিছুদিন গেলো। ম্যাথ, সাইন্সের পাশাপাশি বাংলা বর্ণমালা থেকে শুরু করে বাক্য গঠন পড়িয়েছি। যদিও সে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়তো কিন্তু তার বাংলার দুর্বলতা দেখে বাধ্য হয়ে নিজে থেকে বাংলা পড়াতাম।
যাই হোক, একদিন ছেলেটির বাসায় মেহামান আসে। তার নাকি কোন কাজিন বোনের স্বামী। ছেলেটিকে তার সেই দুলাভাই খুব আদর-যত্ন করে কথা বলেছিলো, তার এটি খুব ভালো লেগে যায়। তাকে যে রুমে পড়াই সে রুমে এক অতিথি বসা ছিলো বসানোর সময়, তখন সে হঠাৎ বলে উঠলো, 'স্যার, আন্নে আঁর দুলাবাই হইবেন্নি? আম্মা কইছে আঁর বইনরে বিয়া করাই দিবো সামনের ফরিক্ষাত ফাশ ন কইরলে! আন্নে আঁর বইনরে বিয়া কইরলে আন্নে আঁরে এই দুলাভাইর মতো আদর কইরবেন, আর আঁই কষ্ট করি আন্নেরে হড়া দেয়ন লাইগদোনো।' (মানে, স্যার, আপনি আমার দুলাভাই হবেন? আম্মু বলেছে আমার বোন আসন্ন পরীক্ষায় [সম্ভবত ক্লাস সেভেন/এইটে পড়তো] পাশ না করলে তাকে বিয়ে দিয়ে দিবে। আপনি আমার বোনকে বিয়ে করলে আমাকে কষ্ট করে আপনার কাছে পড়া দেয়া লাগবে না।)
যাই হোক, আমি তো লা-জওয়াব! বললাম, চুপ করো বলে, যা লিখতে দিয়েছি লিখো। বেশি পন্ডিতি ভালো না।
ওইদিকে অতিথি মুছকি হাসছিলো।
হঠাৎ দেখি ছেলেটি দৌড়ে পাশের রুমে থাকা তার মায়ের কাছে গিয়ে জোরে জোরে বলছে, 'স্যাররে কইছি দুলাভাই বানামু, স্যার সরম পাইছে!' একই কথা তার বোনকেও গিয়ে বললো। তার মা স্কেল নিয়ে পেটাতে পেটাতে আমার সামনে এসে বসিয়ে দিয়ে গেলো। তার মা খুব বিব্রতমুখে বললো, স্যার কিছু মনে করবেন না, ছেলেটা কিছু বুঝে না, যা-তা বলে!
ওই মাসের স্যালারি পাওয়ার পরেই ওই স্টুডেন্টকে টা-টা জানিয়ে চলে আসি। ওইদিনের কথা মনে পড়লে এখনো হাসি পায়!আপনি আমার বোনকে বিয়ে করলে আমাকে কষ্ট করে আপনার কাছে পড়া দেয়া লাগবে না।)
যাই হোক, আমি তো লা-জওয়াব! বললাম, চুপ করো বলে, যা লিখতে দিয়েছি লিখো। বেশি পন্ডিতি ভালো না।
ওইদিকে অতিথি মুছকি হাসছিলো।
হঠাৎ দেখি ছেলেটি দৌড়ে পাশের রুমে থাকা তার মায়ের কাছে গিয়ে জোরে জোরে বলছে, 'স্যাররে কইছি দুলাভাই বানামু, স্যার সরম পাইছে!' একই কথা তার বোনকেও গিয়ে বললো। তার মা স্কেল নিয়ে পেটাতে পেটাতে আমার সামনে এসে বসিয়ে দিয়ে গেলো। তার মা খুব বিব্রতমুখে বললো, স্যার কিছু মনে করবেন না, ছেলেটা কিছু বুঝে না, যা-তা বলে!
ওই মাসের স্যালারি পাওয়ার পরেই ওই স্টুডেন্টকে টা-টা জানিয়ে চলে আসি। ওইদিনের কথা মনে পড়লে এখনো হাসি পায়!
1 Comments