আইনস্টাইনের মৃত্যুর পর তার মগজ চুরি করে নিয়ে গবেষকরা গবেষণা করে কী পেয়েছিলেন?

আইনস্টাইনের মৃত্যুর পর তার মগজ চুরি করে নিয়ে গবেষকরা গবেষণা করে কী পেয়েছিলেন?

মারা গেছেন আইন্সটাইন সালঃ ১৯৫৫ বয়সঃ ৭৬ আইন্সটাইনের মৃত্যুর পর পোস্টমর্টেমের ভার পড়েছিল ড. থমাস হার্ভের ওপর।সেদিন তাঁর মনে ছিল অন্য চিন্তা। শবদেহ ব্যবচ্ছেদের পর সরিয়ে রেখেছিলেন মহাবিজ্ঞানীর মগজ। কাজটা তিনি করেছিলেন গোপনে। জানান নি আইনস্টাইনের পরিবারকে। হার্ভে মস্তিষ্কটা খুলি থেকে বের করেন। তারপর সেটা চুবিয়ে রাখেন ফরমালিনের জারে। খুব বেশিদিন রাখা হয়নি প্রিন্সটন হাসপাতালে। হার্ভে বাড়ি নিয়ে আসেন মগজটা। মগজসহ জারটা বাক্সবন্দি করে তুলে রাখেন নিজের ঘরে। এরপরই শুরু হয় হার্ভের জীবনে উল্টোযাত্রা। প্রিন্সটন হাসপাতালের এক নার্সের সাথে তাঁর অবৈধ সম্পর্কের গুঞ্জন ওঠে। সেটা নিয়ে হইচই। চাকরি যায় হার্ভের। তারপর পাততাড়ি গুটিয়ে চষে ফেলেন গোটা যুক্তরাষ্ট্র। একের পর এক স্ত্রী ত্যাগ করেছেন, কিন্তু যক্ষের ধনের মতো আগলে রেখেছেন মহামূল্য মগজটাকে। কিন্তু ব্রেন যে লুকায়িত আছে সে খোজ পেয়ে যান মাসিক নিউজার্সি পত্রিকার একজন রিপোর্টার স্টিভেন লেভি। ১৯৭০ সালে এই ব্রেইনের খোজে ড. টমাস হার্ভের সাথে দেখা করতে তার নতুন কর্মস্থল ক্যানসাস যান লেভি। সেখানে গিয়ে স্টিভ লেভি দেখেন, আইনস্টাইনের ব্রেইনটি কাঠের দুটি বক্সে রাখা, যার উপরে লেখা ছিল "কোস্টা সাইডার"। তার ব্রেইনের সেরেবেলাম (মাথার একেবারে পিছনে ঘাড়ের কাছে থাকে) আর সেরেব্রাল কর্টেক্স (ব্রেইন এর উপরের পুরো অংশ) এর কিছু অংশ বাদে বাকি পুরো ব্রেইনটি কেটে পাতলা স্লাইস করা হয়েছিল গবেষণার জন্য। ১৯৮৫ সালে একটি পেপার বের হয় যে পেপারের সিনিয়র অথর ছিলেন সেই ড. টমাস হার্ভে। স্নায়ুবিজ্ঞানীরা (Neuro-Scientist) মানুষের মস্তিষ্ককে মোট ৪৭ টি ভাগে(Area) চিহ্নিত করেছেন, যাকে বলে ব্রডম্যান ম্যাপ। এ ম্যাপ অনুসারে মানুষের ব্রেইনের ৯ ও ৩৯ নাম্বার এরিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের প্ল্যানিং, স্মৃতি আর মনযোগ এর জন্য এরিয়া ৯ কাজ করে আর এরিয়া ৩৯ কাজ করে ভাষা আর জটিল সমস্যা নিয়ে। ড. টমাস হার্ভের দল গবেষণা করেছিলেন এই দুই এরিয়ার নিউরন এবং গ্লিয়াল সেল এর অনুপাত নিয়ে। তারা আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক এই অনুপাত তুলনা করেছিলেন আরো ১১ জনে মৃত ব্যক্তির ব্রেইন এর সাথে, যাদের গড় বয়স ছিল ৬৫। এ পেপারের ফলাফলটা ছিল এরকম "The results of the analysis suggest that in left area 39, the neuronal: glial ratio for the Einstein brain is significantly smaller than the mean for the control population (t = 2.62, df 9, p less than 0.05, two-tailed). Einstein's brain did not differ significantly in the neuronal:glial ratio from the controls in any of the other three areas studied." তার মানে দাড়ালো —আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের একমাত্র বাম দিকের ৩৯ নাম্বার এরিয়াতে "একটি নিউরনের জন্য একাধিক গ্লিয়াল সেল" ছিল, যা অন্য ১১ টি মস্তিষ্কে ছিল না। এই রেজাল্টের ব্যাখ্যাটা ছিল এরকম —যেহেতু এরিয়া ৩৯ এ বেশী গ্লিয়াল সেল, তার মানে বেশী আইনস্টাইনের ব্রেইন বেশি শক্তি ব্যয় করে—যার কারণেই হয়তো তার চিন্তা শক্তি ও তাত্বিক জ্ঞান সাধারণের চেয়ে বেশী ছিল। ২০০৬ সালে এরকমই আরেকটি পেপার প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের গ্লিয়াল সেল এর গঠন (যেমন বড় এস্ট্রোসাইট প্রসেস) অন্যদের চেয়ে আলাদা ছিল। আইনস্টাইনের এর মস্তিষ্ক নিয়ে আরেকটি পেপারও বেশ আলোচনায় এসেছিল, যা প্রকাশ হয় ১৯৯৬ সালে। এ পেপারে বলা হয়, তার ব্রেইন এর ওজন ১২০০ গ্রাম যা নরমাল মানুষের চেয়ে ওজনে কম (১৪০০ গ্রাম)। তার ব্রেইন এর এরিয়া ৯ অন্যদের (৫ জনের তুলনায় ) চেয়ে পাতলা ছিল এবং অনেক বেশী নিউরন ছিল। তার মানে অল্প জায়গায় খুব ঘেঁষাঘেঁষি করে অনেক বেশি নিউরন ছিল। ১৯৯৯ সালে আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, আইনস্টাইনের মগজের প্যারাইটাল লোব (টোটাল ৪টি বড় ভাগে ব্রেইন বিভক্ত-প্যারাইটাল লোব হল মাথার ঠিক উপরের লোবটি) খাঁজগুলো অন্যদের চেয়ে আলাদা; পার্শ্বিক খাঁজগুলো ছোট/মিসিং ছিল। আর ব্রেইন এর এ লোব/ভাগটি গাণিতিক যুক্তি, স্থানিক চিন্তাশক্তি নিয়ে কাজ করে থাকে। পাশপাশি তার ব্রেইন ১৫% বেশী প্রশস্ত ছিল। সব কিছু মিলে ধারণা করা হয়, তার নিউরনগুলো কাজ করার জন্য যথেষ্ঠ জায়গা পেত যা তার গাণিতিক ও স্থানিক চিন্তা শক্তিতে সাহায্য করত।সত্যি কথা বলতে, খুব নির্ভুলভাবে মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা করাও অসম্ভব । আইনস্টাইনের ব্রেইন নিয়ে গবেষণার প্রধান অসুবিধা/সীমাবদ্ধতা হলো—পৃথিবীতে আইনস্টাইনের মত জিনিয়াস একজনই ছিলেন/আছে। তাই এ গবেষণা আরো বেশী গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য পৃথিবীর বিখ্যাত গণিতবিদদের ব্রেইন সংগ্রহ করে রাখতে হবে। আইনস্টাইনের মত এরকম বড়মাপের বিজ্ঞানীর মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণার ফলাফল হয়তো একসময় সঠিকভাবে বলতে সক্ষম হবে, মস্তিষ্কের কোন অংশ আসলেই বড়মাপের বিজ্ঞানী হতে বাধ্য করে!তথ্যসূত্রঃ আইনস্টাইনের মগজ প্রদর্শনী

Post a Comment

0 Comments